ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফিফার ভাবনায় ২০৩০ বিশ্বকাপে ৬৪ দল ফারহান-রউফের অঙ্গভঙ্গিতে ক্ষুব্ধ ভারত, আইসিসিতে অভিযোগ আলভারেজের হ্যাটট্রিকে রোমাঞ্চকর জয়ে ফিরল অ্যাতলেতিকো দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে বার্সেলোনার তরুণ তারকা গাভি মেসির জোড়া গোল, নিউইয়র্ককে উড়িয়ে প্লে-অফে ইন্টার মায়ামি লা লিগার প্রথম এল ক্লাসিকোর তারিখ চূড়ান্ত শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ফ‌রিদপু‌রে সাংবাদিকদের সঙ্গে জেলা পুলিশের মত বিনিময় সভা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশে আপত্তি মানববন্ধনে শিক্ষকরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পাবে বিএনপি, জামায়াত ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ : জরিপ সারাদেশে দুর্গাপূজায় কঠোর নিরাপত্তা বড় হচ্ছে ফায়ার ফাইটারদের মৃত্যুর মিছিল রাজনৈতিক-আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে স্বাধীন দুদক সম্ভব নয় আগামী নির্বাচন সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করবেন প্রধান উপদেষ্টা -প্রেস সচিব প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অ্যাপ পোস্টাল ভোট বিডি উদ্বোধন নভেম্বরে আ’লীগের ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা, ককটেল-ব্যানারসহ গ্রেফতার ২৪৪ বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ নির্বাচন, গণতন্ত্র ও এশিয়ায় তরুণদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আলোচনায় দুর্গাপূজায় সার্বিক বিষয় নিবিড় পরিবীক্ষণ করবে ৩ মন্ত্রণালয় ৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ১০ ডিসেম্বর

শিক্ষকদের আন্দোলন নানা প্রশ্নে জর্জরিত

  • আপলোড সময় : ২১-০৯-২০২৫ ০৩:২৩:৫৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২১-০৯-২০২৫ ০৩:২৩:৫৮ অপরাহ্ন
শিক্ষকদের আন্দোলন নানা প্রশ্নে জর্জরিত
* সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে শিক্ষকদের আন্দোলন * মানববন্ধন-অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল ও ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচিসহ মাঠে ৫০ দিন * যানজটের তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ চলাচলকারীদের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর থেকে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। অনেক সময় দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে অনেক সময় পুলিশের লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ধারা হেনস্থার শিকার হয়েছেন। চলতি বছরের শুরু থেকেও নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে রয়েছেন শিক্ষকরা। আন্দোলনের মূল দাবির মধ্যে রয়েছে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো। এসব কারণে শিক্ষকরা নিয়মিত ও বিরতি দিয়ে মানববন্ধন, অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল ও ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করেছেন। এসব কর্মসূচির মধ্যে কয়েক বার তাদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলাও চালিয়েছে। গত ১৪ মাসে প্রায় ৫০দিনের বেশি আন্দোলন করেছেন। তবে এসব কারণে নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত শিক্ষকদের আন্দোলন। শিক্ষকদের এত আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। কেউ কেউ বলছেন, সরকারকে বিব্রত করতে এসব আন্দোলনের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে এসব আন্দোলনের কিছু যৌক্তিকতাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে শিক্ষকদের এত দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা। শিক্ষকদের আন্দোলনের কিছু যৌক্তিকতা রয়েছে। তারা যে ধরনের আর্থিক সুবিধা পান তার চেয়ে বেশিই পাওয়া উচিত। তবে গ্রাজুয়ালি তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। এসব একবারে বাড়ানো বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এদিকে ২০১৩ সালে সারাদেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। সমান যোগ্যতা থাকার পরও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দেশের চলমান যোগ্য চার হাজারের অধিক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ৩০ দিনের বেশি আন্দোলন করেছেন। দেশে ২৬ হাজারের বেশি নন-এমপিওভুক্ত মাদরাসা রয়েছে। সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট করছেন শিক্ষকরা। সবশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসচি পালন করেন তারা। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সরকারের পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ ঘোষণা দ্রæত বাস্তবায়নের দাবিতে এ অবস্থান ধর্মঘট করেন তারা। তবে আন্দোলনকারী বলছেন, প্রাথমিক স্কুলের মতো সব বিধি-বিধান মেনেও মাদরাসা শিক্ষকেরা চার দশক ধরে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো জাতীয়করণ ঘোষণা করতে হবে। দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে এন্ট্রি পদ নবম গ্রেডভিত্তিক পদ সোপানের দাবি জানানো হয়েছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী ২১ কর্মদিবসের মধ্যে দাবিগুলোর ব্যাপারে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সফল বৈঠক না হলে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এন্ট্রিপদ নবম গ্রেড ধরে চারস্তরীয় অ্যাকাডেমিক পদসোপান বাস্তবায়ন পরিষদ’ শীর্ষক ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণের আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম আলোচিত বিষয়। ১৯৭২ সালের পর ২০১৩ সালে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ ও মাদরাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাইরে রয়ে যান। একই ধরনের শিক্ষায় অবদান রাখার পরও তারা সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলনায় কম সুযোগ-সুবিধা পান। ৪৫-৫০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে কয়েক লাখ শিক্ষক কর্মরত। তারা আংশিক সরকারি ভাতা পেলেও চাকরির স্থায়িত্ব, পেনশন, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, সরকারি স্কেল অনুযায়ী সমান বেতন ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত। তাদের মূল দাবি হলো-পূর্ণ জাতীয়করণ এমপিওভুক্ত সব স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি বেতন কাঠামোর আওতায় আনা। সমান সুযোগ-সুবিধা সরকারি শিক্ষকদের মতো উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া ভাতা ইত্যাদি প্রদান। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ‘জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’ এর সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসাইন আজিজি বলেন, আমরা ২০ শতাংশ বাসা ভাড়াসহ আরও কিছু বিষয় দাবি করেছি। আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে সব কিছু মেনে না হলে আমরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির দিকে যাবো। দেশে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা প্রাথমিক (ইবতেদায়ি) থেকে কামিল (স্নাতকোত্তর সমমান) পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ধারার শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অবিচার, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। শিক্ষকদের মূল দাবির মধ্যে রয়েছে পূর্ণ জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসা। এছাড়া বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিতদের জন্য দ্রæত এমপিও কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা। এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন ও অবকাঠামো সহায়তা করা। শিক্ষকদের আন্দোলনের বেশ কিছু ব্যাপারে যৌক্তিকতা থাকলেও আরও কিছু ফ্যাক্টর কাজ করছে বলে মনে করেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, শিক্ষকদের রাস্তায় নেমে এমন আন্দোলন রাষ্ট্রের জন্যও লজ্জাজনক। কারণ এর একটা নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি শিক্ষাঙ্গনে পড়ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সদ্য সাবেক সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের কিছু যৌক্তিকতা রয়েছে। তারা যে ধরনের আর্থিক সুবিধা পান তার চেয়ে বেশিই পাওয়া উচিত। তবে গ্রাজুয়ালি তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। এসব একবারে বৃদ্ধি করা বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তাতে বাজেটের ওপর চাপ পড়বে। তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন ভাতা যেমন বেশি হওয়া উচিত তেমনি তাদের পারফরমেন্সও বাড়াতে হবে। বর্তমানে অনেক শিক্ষক আছেন যারা নিয়মিত ক্লাসে যান না, কিন্তু কোচিং সেন্টারে ঠিকমতো ক্লাস নেন। শিক্ষকদের অধিকার এবং দায়িত্বশীলতা সমান্তরালে এগিয়ে নিতে হবে। আর ক্লাস রুমে পড়াশোনা না থাকায় আমরা অনেক প্রতিভা হারিয়ে ফেলছি। রাজধানীতে এসে নিয়মিত আন্দোলন করার নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষাঙ্গনে পড়ছে। এছাড়া শিক্ষকরা দিনের পর দিন আন্দোলনে থাকায় শিখন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে তিনটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন,প্রথমত সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরাও এক ধরনের ভ‚মিকা পালন করছেন। দ্বিতীয়ত যাদের রাজনৈতিক মিশন-ভিশন রয়েছে তারা বিভিন্নভাবে এসব আন্দোলনকে ভিন্ন খাতের নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তৃতীয়ত কিছু শিক্ষক রয়েছেন যারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে কাজ করছেন। তারা মূলত শিক্ষকদের মধ্যে নেতা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেন,দেশের শিক্ষাখাত খুবই অবহেলিত। শিক্ষদের যে স্কেলে বেতন দেওয়া হয় সেটি খুবই কম। পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষকরা কম বেতন পান। তবে তাদের সুযোগ-সুবিধার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করার দরকার নেই। এসব কাগজে-কলমেও করা যায়। কিন্তু রাস্তায় না নামলে কোনো দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে এসব আন্দোলন নিয়মিত ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। গত ১৩ আগস্ট সচিবালয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার জানান, এতসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এমপিওভুক্ত এতসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে পারবে না। এটা অত্যন্ত জটিল ও চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। এটা করা ইন্টেরিম গভর্মেন্টের (অন্তর্বর্তী সরকার) পক্ষেও সম্ভব নয়। নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার এটা করতে পারে। তবে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ